জীবনে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক হওয়া নতুন কিছু নয়। অনেক দিনের ভালো লাগা থেকে সম্পর্ক যেমন শক্ত হয় আবার নানা কারণে সম্পর্কে ফাটল ধরাও কিন্তু দোষের নয়। সারা জীবন একসাথে এক ছাদের নিচে থাকার প্রত্যয়ে সম্পর্কের জোড়া লাগলেও অনেক সময় আলাদা হতেই হয়। কিন্তু আলদা হওয়ার মানে প্রতিপক্ষ কিংবা শত্রু হওয়া নয়।

আমাদের দেশে অনেক সময় এমনই দেখা যায়। প্রেমের সম্পর্ক কিংবা বিয়ের পর তালাক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। বদনাম, অপ্রীতিকর ছবি, ভিডিও-অডিও জনসম্মুখে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যার ফলে সম্পর্কছেদের সঙ্গে সঙ্গে শত্রুতার সৃষ্টি হয়; কিন্তু কেন?

কোনো সম্পর্ক বিচ্ছেদের পরও দুজনের মধ্যে সৌজন্যতাবোধ করাও কর্তব্যের বিষয় হয়ে যায়। এমন সৌজন্য থাকলে জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রেও সৌজন্যতাবোধ প্রচার হয়। অনেকাংশে প্রতিহিংসার মাত্রা কমে যায়। সম্পর্কে বিচ্ছেদ হতেই পারে-

পেছনের গ্লানি মুছে ফেলুন: যখন দেখছেন দুজন একসঙ্গে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এ মুহূর্তে বিচ্ছেদই উপযুক্ত। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করুন। পরামর্শের মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের মতো করে আলাদা হয়ে যান। পেছেনর গ্লানি মুছে সাদরে বলে চলে যান। হয়তো একসঙ্গে থাকছেন না কিন্তু সম্পর্কটা সুন্দর থাকলে ক্ষতি কী?

মিথ্যার আশ্রয় নেবেন না: বিচ্ছেদের সময় অনেকেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। মামলা পর্যন্ত গড়ায় এক সময়; কিন্তু কেন? যার সঙ্গে বিচ্ছেদ করতে চান তার সঙ্গে তো অতীতে অনেক সময় কাটিয়েছেন। ভালোবেসেছন শাসন করেছেন। এক সময়ের প্রিয় মানুষের ওপর তবে কেন নির্মম মিথ্যার আশ্রয় নেবেন? সরাসরি বলে আলাদা হলে অসুবিধা কোথায়? ‘আজ থেকে আমরা আলাদা হতে চাই। তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো একেবারই আলাদা হতে চাই’- বলায় ক্ষতি কী? যার সঙ্গে থাকা সম্ভব নয় তার সঙ্গে চলাফেরা না করাই ভালো। স্বেচ্ছায় চলে যাওয়া সৎ মানসিকতার পরিচয়।

দেখা হলে এড়িয়ে যাবেন না: একদিন হলেও তো একজনকে ভালোবেসেছেন। হয়তো নিজেদের ভুলের কারণে অথবা ছাড় দেয়া-নেয়ার ঘাটতিতে এখন আলাদা হয়ে গেছেন। তাতে কী, দেখা হলে না চেনা বা না দেখার ভান ধরবেন না। কুশলবিনিময় করতে পারেন। ‘আমাকে ছাড়া কেমন আছো? এখন কোনো মেয়ে বা ছেলের সঙ্গে আছো কি?’ এসব বিষয় ছাড়াও সমাজের অন্যান্য মানুষের মতো সৌজন্য আচরণ করলে সময় নষ্ট হবে না। নিজেদের মধ্যে প্রতিহিংসার মাত্রা কমেও যেতে পারে। বাড়তে পারে সৌজন্যতা।

আগে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ভুলে যান: একসঙ্গে অনেক দিন ছিলেন। দুজন একসঙ্গে থাকলে অনেক কিছু হয়। ভালোবাসা, রোমান্স, ঝগড়া-বাগবিতণ্ডা যেকোনো কিছু হতে পারে। এসব বিষয় অন্যের সঙ্গে আলোচনা করবেন না। যাকে এসব বিষয় বলবেন সে আপনাকে এবং যার বিষয় বলছেন- দুজনকে ভালো মনে নাও করতে পারে এবং আরও দুই-চারজনকে বলে আপনাদের ব্যক্তিত্ব নষ্ট করতেই পারে। তাই পেছনের সব কিছু নিজের মধ্যেই গোপন রাখেন।

বিচ্ছেদ হওয়ার মুহূর্তেও শেষবার ভাবুন: আজই হয়তো চলে যাচ্ছেন দুজন দুজনকে ছেড়ে। কিছুক্ষণ পর থেকে আপনি ও আপনার অনেক দিনের সঙ্গী আলাদা হয়ে যাচ্ছেন। এ মূহর্তেও শেষবার ভাবুন- একসঙ্গে কী থাকা যায় না? কোন ভুলে এতদিনের সম্পর্ক বিচ্ছেদ হতে যাচ্ছে? বিচ্ছেদ হতেই পারে; কিন্তু কোন ভুলের কারণে? তা নিয়ে আজই শেষবার আলোচনা করুন দুজন। একজন ছাড় দিতেই পারেন। অথবা ভুলটা আজকেই মুছে ফেলতে পারেন।

মনে রাখবেন বিচ্ছেদ কোনো অপরাধ নয়, যদি তা সমঝোতার মাধ্যমে হয়। এটাও ভুলে যাবেন না বিচ্ছেদ হয় সামান্য সময়ের ব্যবধানে; অথচ সম্পর্ক গড়তে অনেক সময় লাগে। মাস, বছর এমনকি দশকও। তাই বিচ্ছেদ হওয়ার আগে নিজেকে শুধরাতে অসুবিধা কোথায়?